চর কুকরীমুকরী সরকারী গেজেট মূলে ঘোষিত একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য। এখানকার বনের ধরণ হলো উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বাগান। এটি ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার কুকরীমুকরী ইউনিয়নের অন্তর্গত। উপকূলীয় বন বিভাগ, ভোলার কুকরীমুকরী রেঞ্জের অধীন কুকরীমুকরী সদর বিটে অবস্থিত। এর আয়তন ৪০.০ হেক্টর; যদিও বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য সংলগ্ন বনাঞ্চলে আরও প্রায় ৭০০.০ হেক্টর নিবিড় ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। যা এ বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যের অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব।
এটি চারপাশে নদী ও খাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর উত্তরে শাহাবাজপুর চ্যানেল, পূর্বে পাতিলা খাল, দক্ষিণে কুকরীমুকরী খাল, পশ্চিমে বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদী। কুকরীমুকরী ভোলার মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। ভোলা বা চরফ্যাশন থেকে বাসে কচ্ছপিয়া পর্যন্ত যাওয়া যায়। এরপর নদী পথই সেখানে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে কচ্ছপিয়া-কুকরীমুকরী বাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল করে। তাছাড়ও কচ্ছপিয়া হতে ভাড়া করা ইঞ্জিন চালিত দেশীয় নৌকায় কুকরীমুকরী যাওয়া যায়। এই দ্বীপটির মধ্যে পায়ে হাঁটা রাস্তা ছাড়া অন্যকোন রাস্তা নেই।
এটি একটি মানবসৃষ্ট ম্যানগ্রোভ বন। এখানকার প্রধান বৃক্ষপ্রজাতি কেওড়া। এখানে ছইলা, গেওয়া, সুন্দরী, বাইন, কাঁকরা প্রভৃতি প্রজাতি ছাড়াও অনেক রকম লতাগুল্ম আছে। প্রাণীকুলের মধ্যে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, বনমোরগ, শেঁয়াল, বেজী, কাঠবিড়ালী, বিভিন্ন প্রকার সাপ, গুইসাপ, ডলফিন, কাকড়া, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এখানে শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে। তা’ছাড়া দেশীয় অনেক প্রজাতির বক, চিল, গাংচিল, মাছরাঙ্গাও দেখতে পাওয়া যায়। মানবসৃষ্ট এ বন বাগান ক্রমশঃই কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক বনের বৈশিষ্ট্যসমূহ লাভ করছে এবং এর ফলশ্রুতিতে বৃক্ষও প্রাণী প্রজাতিতে বৈচিত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যঃ এখানে রয়েছে সবুজের সমারোহ, যা দেখলে প্রাণ জুড়ায়। এখানে বিভিন্ন প্রকার পাখির ডাকাডাকি শোনা যায়। পানিতে হাঁসের সাঁতারকাটা দেখা যায়। ডলফিন ও ভোঁদরের পানিতে ডুবদেয়া ও জেগে উঠার দূর্লভ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারন করার সুযোগ আছে। বানরের এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি, হরিণের মায়াবী চোখের চাহনি দেখে মন ভরে যায়। দেখা যাবে ইলিশ মাছ ধরার কৌশল ও জালে আটকানো তাজা ইলিশ। ইচ্ছে করলে তাজা ইলিশের স্বাদও নেওয়া যাবে। গরু ও মহিষের পালের সাঁতারকেটে নদী ও খাল পার হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। এখানে রয়েছে ছোট একটি বেলাভূমি; যেখানে দাঁড়িয়ে সাগরের ঢেউয়ের আছড়ে পরার দৃশ্য দেখা যায়। এ অভয়ারন্যের ক্রমবর্ধমান জীব বৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার; যার পরশে ভ্রমন পিপাসুদের প্রান জুড়ায়।