বন অধিদপ্তরের আওতায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষন উইং গঠিত। এই উইং এর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন একজন উপ প্রধান বন সংরক্ষক। একটি একাডেমি, তিনটি বন বিদ্যালয় ও একটি প্রশিক্ষন কেন্দ্র নিয়ে এই উইং এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে বন বিদ্যালয়গুলোকে আধুনিকিকরণ ও যুগোপযোগী পাঠ দানের উদ্দেশ্যে বিদ্যালয়গুলোর নাম পরিবর্তন করে ফরেষ্ট্রী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইন্সটিটিউট হিসাবে নামকরণ করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো হলোঃ
২। ফরেষ্ট্রী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম
৩। ফরেষ্ট্রী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইন্সটিটিউট, সিলেট
৪। ফরেষ্ট্রী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইন্সটিটিউট, রাজশাহী
৫। বন উন্নয়ন ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র (এফ ডিটিসি), কাপ্তাই।
উপরে উল্লেখিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলোঃ
ফরেস্ট একাডেমি, চট্টগ্রাম ১৯৬৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্থাপিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর পূর্ব নাছিরাবাদ শিল্প এলাকায় ১১.১২ একর পাহাড়ী ভূমিতে ফরেস্ট একাডেমী অবস্থিত। পূর্বে এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বন মহাবিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিল। একাডেমীর প্রধান একজন বন সংরক্ষক পদমর্যদার যিনি পরিচালক হিসাবে কর্মরত।
বন বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে বন ব্যবস্থাপনায় দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলে বনজ সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়।
ক. উপ বন সংরক্ষক/বিভাগীয় বন কর্মকর্তাগণকে আধুনিক বন প্রশাসন সম্পর্কে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান।
খ. বিসিএস (বন) ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষকগণের ফরেস্ট্রিতে মাস্টার ডিগ্রী প্রদান।
গ. সহকারী বন সংরক্ষক ও ফরেস্ট রেঞ্জারগণকে ওরিয়েন্টেশন এবং রিফ্রেসার্স কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান।
ঘ. বন, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কীয় সেমিনার/ওয়ার্কশপের আয়োজন করা।
১৯৬৫ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ২৫৩ জন বন কর্মকর্তাকে ফরেস্ট্রিতে মাষ্টার্স, বিএসসি (পাশ) ও ডিপ্লোমা ডিগ্রী এবং ১৩৮৫ জনকে স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে । এছাড়াও একাডেমীতে বিভিন্ন সময়ে বন কর্ম কর্তাদের নিয়ে সেমিনার করা হয়।
ক্রমিক নং | কোর্সের নাম | প্রশিক্ষণার্থী |
১. | এম.এসসি ইন ফরেস্ট্রি | ২৮ জন |
২. | এমএফ ইন ফরেস্ট্রি | ৩০ জন |
৩. | বি.এসসি(পাশ) ইন ফরেস্ট্রি | ১১৯০ জন |
৪. | ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি | ৭৬ জন |
৫. | সল্পকালীন কোর্স | ২৪১১ জন |
মোট | ৩৭৩৫ |
এটি চট্টগ্রামে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইন্সটিটিউটে ছাত্রদেরকে বিভাগীয় কোটা অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩ বৎসর মেয়াদী ৬ টি সেমিষ্টারের মাধ্যমে ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী ডিগ্রী দিয়ে আসছিল। বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর আওতাধীন বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত অন্যান্য ডিপ্লমা ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স এর সাথে সামঞ্জস্য ও সমতা আনয়নকল্পে ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী কোর্সটি যুগোপযোগী করার লক্ষে ফরেষ্ট্রী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী ইন্সটিটিউট, চট্রগ্রাম ৩ বৎসর মেয়াদী কোর্সটিকে ৪ বৎসর মেয়াদে উন্নিত করে। প্রতি বছর গড়ে ৫০ জন ডিপ্লোমাধারী ছাত্র এই প্রতিষ্ঠান হতে বের হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম ব্যাচ বের হয়। এই প্রতিষ্ঠান হতে উক্তীর্ণ ছাত্রদেরকে বন অধিদপ্তরের ফরেষ্টারের শূন্য পদের বিপরীতে ফরেষ্টার হিসেবে নিয়োগ প্রদানের সুযোগ রয়েছে।
কর্মকাণ্ড
১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে এখানে প্রথম ৩ বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী কোর্সে ছাত্র ভর্তি করা হয় এবং এ পর্যন্ত ১৭ টি ব্যাচে মোট ৫৫৮ জন ছাত্রকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে উক্ত কোর্সটি ৪ বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী কোর্সে উন্নিত হওয়ার পর ২০১৪ ইং সাল ৪ বৎসর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী কোর্সে মোট ৪৮ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছে।
ফরেষ্টার ও বন প্রহরীদের ইন সার্ভিস প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য এই ইনষ্টিটিউটটি ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয়। এ প্রতিষ্ঠান হতে ফরেষ্টারদের ইন সার্ভিস প্রশিক্ষন দেয়া হয় এবং তাদের ২ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী দেয়া হয়।
ফরেষ্টারদের ইন সার্ভিস ট্রেনিং দেয়ার জন্য ১৯৮৫ সালে রাজশাহীতে এই ইনষ্টিটিউট স্থাপন করা হয়। এ প্রতিষ্ঠান হতে ফরেষ্টারদের ইন সার্ভিস প্রশিক্ষন দেয়া হয় এবং তাদের ২ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ফরেষ্ট্রী দেয়া হয়। ২০০৯ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তিত হয়ে ফরেস্ট্রী সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউট, রাজশাহী করা হয়। ৩.৫৩২৫ একর জমির উপর অত্র প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ভবন নির্মিত হয়।
সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (সিডা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ও সহযোগিতায় এবং সিডার অর্থায়নে ১৯ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে “বন উন্নয়ন ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র” নামে বন অধিদপ্তরের আওতায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার কাপ্তাইতে প্রতিষ্ঠিত হয়। বনায়ন, বন সম্প্রসারণ ও বন ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যথোচিত এবং উন্নত কলাকৌশল সরকারী বন বিভাগ, বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (বি.এফ.ডি.সি), বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বি.সি.আই.সি), উপজাতীয় জনগোষ্ঠী এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এন.ডি.ও.), কাষ্ঠ ব্যবসায়ী কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমে দেশে উন্নত মানের বনায়ন ও পরিচর্যা, কাষ্ঠ আহরণ, অপচয়রোধ ও ব্যবহারিক সাশ্রয়, পাহাড়ী ঢালুভূমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি প্রবর্তন করার মূল লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ কেন্দ্রে নিম্নেবর্ণিত চার টি শাখায় প্রশিক্ষন ও মাঠ পর্যায়ের গবেষণামূলক কর্মকান্ড শুরু করা হয়। সেগুলো হলোঃ
ক) বন সম্প্রসারণ শাখা
খ) গাছ কর্তন ও কাষ্ঠ আহরণ (বেসিক লগিং) শাখা
গ) বাগান শাখা এবং
ঘ) প্রশিক্ষন শাখা।