অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, ক্ষরা, সামুদ্রিক ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন কোন ঘটনা নয়। কিন্তু বিশ্বজুড়ে নগরায়ণ, শিল্প বিপ্লব, নির্বিচারে বন নিধন ইত্যাদি অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ডে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপ্তি, প্রকোপ ও আবর্তকাল এ জনপদকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। সে সাথে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা যেমন- জলাবদ্ধতা, মরুময়তা, উপকূলীয় অঞ্চলের খানিকটা (১৮ শতাংশ) সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, উপকূলীয় কৃষি জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি খাদ্য নিরাপত্তার হূমকি। বাংলাদেশ আজ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের চরম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশকে এ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কোনভাবেই দায়ী করা না গেলেও এ দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বিরূপ প্রভাবের নির্মম শিকার। সরকার এ সমস্যা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস সম্প্রচার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে যথাসময়ে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর, দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ, উপকূলীয় বাঁধ তৈরী, লবণাক্ত ও খরা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, বাঁধ ও বাঁধ সংলগ্ন চর এলাকায় বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টি। কিন্তু নতুন নুতন মাত্রার প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে আরও প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বিত প্রয়াস। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখতে ও এর বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে ১৯৯২ সনে স্বাক্ষরিত জাতিসংঘের কাঠামোগত কনভেনশন (UNFCCC) এবং এর আওতায় প্রণীত কিয়োটো প্রটোকল অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত দেশসমূহ উন্নয়নশীল ও পরিবর্তিত অর্থনীতির দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিলেও তা খুব একটা আশানুরূপভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। তাই উন্নয়নশীল দেশ ও পরিবর্তিত অর্থনীতির দেশসমূহ উন্নত দেশ সমূহকে তাদের সহায়তার আশ্বাসকে আইনী কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ২০২০ সনের মধ্যেই এ ধরণের আইনী কাঠামো গঠন করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ আশা প্রকাশ করেছেন।