বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ২(৩১) অনুসারে “সহ-ব্যবস্থাপনা” অর্থ কোন একটি এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে উক্ত সম্পদের পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সকল পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ বুঝায় এবং যাহা ধারা ২১ এ উল্লিখিত সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি;
ধারা ২১। সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
(১) সরকার অভয়ারণ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বন অধিদপ্তর, বনাঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সকল পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করিবার জন্য সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করতে পারবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করতে এবং উক্ত কমিটির কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দিতে পারবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘকালের চলে আসা প্রথাগত পদ্ধতির নানা দুর্বলতা দুর করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (বিশেষত: উন্নয়নশীল বিশ্বে) প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আশার সঞ্চার করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এ পদ্ধতি আদর্শ মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষ করে রক্ষিত বন এলাকার সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় এ পদ্ধতির প্রবর্তন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। যার ফলে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যও অর্জিত হচ্ছে। ইউএসএআইডি-র সহায়তায় নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প (২০০৪-২০০৮) এর মাধ্যমে ৫টি রক্ষিত এলাকায় এবং Integrated Protected Area Co-management (IPAC) প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ টি রক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়। রক্ষিত এলাকার জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নীতির ভিত্তিতে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ন্যায় বিচার ভিত্তিক অংশীদারিত্বমূলক বন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি অর্জনযোগ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন আবশ্যক। সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সম্পদ ব্যবহারকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারগন সরকারের পাশাপাশি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ বন বিভাগ দারিদ্র্য বিমোচন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে রক্ষিত বনাঞ্চলে ২০০৩/০৪ ইং সালে জন-অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন করে। নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পে (এনএসপি, ২০০৩-২০০৮) এ ৫টি রক্ষিত বনাঞ্চলে ৮টি সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠণ গঠন করা হয়, পরবর্তিতে সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা (আইপ্যাক, ২০০৮-২০১৩) প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭টি রক্ষিত বনাঞ্চলে ২৩টি সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠণে সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রতিবেশ ও জীবিকায়ন (ক্রেল, ২০১৩-২০১৭) প্রকল্প দেশের অন্যান্য রক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্ষম সম্প্রসারণ করছে। ইউএসআইডি, জিআইজেড, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী বন বিভাগের এ উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়ে রক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্ষমকে সহযোগীতা করছে।