Wellcome to National Portal
বন অধিদপ্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৯ August ২০২৪

সহ-ব্যবস্থাপনায় অর্জিত সাফল্য

 

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ২(৩১) অনুসারে “সহ-ব্যবস্থাপনা” অর্থ কোনো একটি এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মধ্যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে উক্ত সম্পদের পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সকল পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ বুঝায়।

 

প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘকালের চলে আসা প্রথাগত পদ্ধতির নানা দুর্বলতা দূর করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে (বিশেষতঃ উন্নয়নশীল বিশ্বে) প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আশার সঞ্চার করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এ পদ্ধতি আদর্শ একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ ও ইউএসআইডি যৌথ উদ্যোগে নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প (২০০৪-২০০৮) এর মাধ্যমে ৫টি রক্ষিত এলাকায়, সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহ- ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বা আইপ্যাক প্রকল্প (২০০৮-২০১৩) এর মাধ্যমে ১৮টি রক্ষিত এলাকায় এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রতিবেশ ও জীবিকা বা ক্রেল প্রকল্প (২০১৩-২০১৮) এর মাধ্যমে ২২টি রক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়। রক্ষিত এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নীতির ভিত্তিতে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ন্যায় ভিত্তিক অংশীদারিত্বমূলক বন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি অর্জনযোগ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন আবশ্যক। সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, সম্পদ ব্যবহারকারী ও অন্যান্য অংশীজন সরকারের পাশাপাশি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

 

বাংলাদেশের রক্ষিত এলাকা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবিকায়ন, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বাসস্থান ও খাদ্যের উৎস এবং দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা, বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের আবাসস্থল এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবেও রক্ষিত এলাকার গুরুত্ব অপরিসীম। জনসংখ্যাবৃদ্ধি, দারিদ্র্য, জ্বালানীকাঠ সংগ্রহ, অবৈধভাবে গাছকর্তন, বন বিভাগের পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, গবাদি পশুর বিচরণ, বনে আগুন এবং সর্বোপরি বনভূমি কৃষি ও জনবসতিতে পরিনত হওয়ায় বাংলাদেশের রক্ষিত এলাকা সমূহ হুমকির সম্মুখীন।

 

এ প্রেক্ষাপটে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের বনবিভাগ পাঁচটি রক্ষিত এলাকায় আটটি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতায়, ২০১৫ পর্যন্ত বনবিভাগ নিসর্গ সহায়তা প্রকল্প (NSP, ২০০৩-২০০৮), সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (IPAC, ২০০৮-২০১৩) এবং ক্লাইমেট  রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ এন্ড লাইভলি হুডস্ প্রকল্প (CREL, ২০১৩-২০১৮) এর মাধ্যমে ২২টি রক্ষিত এলাকায় ২৮ টি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে। কিন্তু আর্থিক প্রতিবন্ধকতা, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনীতিবিদদের প্রভাব, প্রকল্প নির্ভরতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দূর্বলতার কারণে সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এখনও আশানুরূপ ভ‚মিকা রাখতে পারেনি। সরকার ইতোমধ্যে রক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭ অনুমোদন এবং সহ-ব্যবস্থাপনার একটি পূর্নাঙ্গ রূপরেখা প্রনয়ন করেছে, যার সফল বাস্তবায়নে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও বন নির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবন-মানের উন্নয়ন হবে। বিশ্বব্যংকের অর্থায়নে চলমান টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প (২০১৯-২০২৩) এর আওতায় সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করণ ও নতুন রক্ষিত এলাকায় সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

বনাঞ্চলের রক্ষিত এলাকা সমূহ ব্যবস্থাপনার জন্য সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সহ-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ পদ্ধতির কারণে পূর্বে যারা বন থেকে অবৈধভাবে সম্পদ আহরণের সুযোগ খূজতেন তারাই বনকর্মীদের সাথে বনজসম্পদ রক্ষা করছেন। রক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনা উন্নত হয়েছে, বনে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। Grant Financing এর আওতায় রক্ষিত এলাকায় পর্যটন থেকে অর্জিত আয়ের ৫০% ল্যান্ডস্কেপ উন্নয়ন ও জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে। রক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বন অপরাধ ও বনজসম্পদের পাচার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

 

http://nishorgo.org/