শেরপুর জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইপাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পাদদেশে ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুর জেলার তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং উত্তরাঞ্চলের প্রধান ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি গজনী ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিকট স্পট হিসেবে পরিচিত। মনোরম পাহাড়ি শোভামন্ডিত গজনীতে একটি প্রাচীন বটগাছের পূর্বদিকে প্রায় ২ শত ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল অবকাশ ভবন। ওই প্রাচীন বটগাছের বিশাল গোল চত্বরটি শান বাঁধানো। শান বাঁধানো সেই বিশাল বটগাছটির ছায়ায় চারপাশে দলবদ্ধভাবে আনন্দ আড্ডায় মেতে ওঠে পিকনিক দলগুলো। গারো, কোট, হাজং বানাই, ডালু ও হদি উপজাতি অধ্যুষিত গারো পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ-সুনীল জলের লেক ও দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ বনানীর মাঝে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট উন্নতমানের দ্বিতল রেষ্ট হাউজ। সমতল ভূমি থেকে অবকাশ ভবনে উঠানামা করার জন্য পাহাড় কেটে তৈরী করা হয়েছে দু’শতাধিক সিঁড়িসহ আকর্ষণীয় আঁকাবাঁকা ‘পদ্মসিঁড়ি’। ‘পদ্মসিঁড়ি’র পাশেই গজারী বনে কাব্য প্রেমীদের জন্য কবিতাঙ্গনের গাছে গাছে ঝোলানো আছে প্রকৃতি নির্ভর রচিত কবিতা। লেকের পানির উপর ভাসমান সুদৃশ্য দ্বিতল জিহান অবসর কেন্দ্র ছাড়াও লেকের মাঝে কৃত্রিম দ্বীপ ও দ্বীপের উপর লেকভিউ পেন্টাগন। দ্বীপে যাতায়াতের জন্য রয়েছে স্টিল রোপের ওপর নির্মিত দোদুল্যমান সেতু। কৃত্রিম লেকে নৌ বিহারের জন্য রয়েছে বিদেশী ‘প্যাডেল বোট’ আর আকর্ষণীয় ‘ময়ূরপংঙ্খী নাও’।
পাড়, হাজং কুচ এই তিন সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে। অন্য দুই আদিবাসীদের চাইতে গাড়দের জীবন মান সবুজ বেশ উন্নত। মাটি খুড়ে পাথর উত্তোলন, নয়ন জুনানো প্রাকৃতিক দৃশ্য, মিনি চিগিড়য়াখানা, ঝর্ণার অবিরাম স্রোতধারা সবুজ বনানী বিষন্ন মনকেও উৎফুল্ল করবে। গজনী যাওয়ার সড়ক পথে বৃক্ষের নির্শল ছায়া এবং দুই পাশের বিশাল বিলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য মন মেজাজকে ফুরফুরে করে দেয় নিঃসন্দেহে। সুউচ্চ শীর্ষ পাহাড় চূড়ায় নির্মিত হয়েছে আধনিক স্থাপত্য রীতিতে ৬৪ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন নয়নকাড়া সাইট ভিউ টাওয়ার। এই টাওয়ার চূড়ায় উঠে দাড়ালে চারদিকে শুধু দেখা যায় ধূসর, আকাশী ও সবুজের মিতালী। সীমান্তবর্তী বনভুমিার সবুজ গাছগাছালি। দূরের উপত্যকা ও অধিত্যকা। দূর ঝরনার রূপালী প্রবাহ। এখানে মেঘমুক্ত স্বচ্ছ আকাশে ভরা পূর্নিমা রাতের পরিবশে মোহময়। অবকাশ কেন্দ্রে প্রবেশ পথের রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে সৃষ্ট ঘোড়ার খুরের ন্যায় ক্রিসেন্ট লেকের তীর থেকে পশ্চিমে অবস্থিত অন্য আকেটি লেকের তীরে যাওয়ার জন্য পাহাড় ও রাস্তার তলদেশে খনন করা হয়েছে রোমঞ্চকর সুড়ঙ্গ পথ ‘পাতালপুরী’। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে জলপ্রপাত ‘নির্ঝর’। হ্রদ পেরিয়ে পশ্চিম পাহাড়ে যেতে চোখে পড়বে বর্ণিল সংযোগ সেতু ‘রংধনু’। ইকোপাক, অর্কিড হাউস, মিনি চিড়িয়াখানার হরিণ, বানরসহ আরো অনেককিছুই চোখে পড়বে ভ্রমণ পিপাসুদের। এছাড়া পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে শেরপুরের জলো প্রশাসক মোঃ নাসিরুজ্জামানের প্রচেষ্টায় চলতি মওসুমে নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ কৃত্রিম জলপ্রপাত ‘গজনী পবিত্র কুন্ডু’।
রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি সড়ক পথে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টায় গজনীতে পৌঁছানো যায়। মহাখালী বাস টারমিনাল থেকে ড্রীমল্যান্ড স্পেশাল সার্ভিস, সাদিকা, মুক্তিযোদ্ধা স্পেশালসহ বিভিন্ন সার্ভিসে ঢাকা হতে শেরপুর আসবেন। এরপর শেরপুর থেকে বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি চালিত অটো রিক্সা বা রেন্ট-এ-কারে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর হয়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যেতে পারবেন। উল্লেখ্য, নিরাপত্তাজনিত কারণে অবকাশ কেন্দ্রের রেষ্ট হাউজে রাত যাপনের অনুমতি নেই।